দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত (০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)
দিন বদলাচ্ছে বরেন্দ্রের আদিবাসী নারীদের। এ অঞ্চলের আদিবাসী নারীরা এক সময় অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে কোন রকমে জীবনযাপন করলেও এখন সময়ের স্রোতে এগিয়ে এসেছেন। এদের একজন সফল নারী আদুরী মার্ডি (৩০)।
আদুরী রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু এলাকার বাসিন্দা। ৭ থেকে ৮ বছর আগেও দিন যেত তার অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এখন আদুরী এলাকার সফল কৃষাণি। কেঁচো সার উৎপাদন ও বসতবাড়ির আশপাশে বাগান তৈরিতে এ বছর অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক। আদিবাসী এ কৃষাণীর অগ্রযাত্রায় অনুপ্রাণিত এখন এলাকার ভূমিহীন ও প্রান্তিক আদিবাসী কৃষাণ-কৃষাণীরা। তাদের হাত ধরেই দিন বদলের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বরেন্দ্র কৃষি।
কেবল কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-েও বেশ সক্রিয় আদুরী মার্ডি। এলাকার কৃষি সংক্রান্ত সব ধরনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান এ কৃষাণি। সম্প্রতি কথা হয় সফল এ কৃষাণী আদুরীর সঙ্গে।
দারিদ্র্য জয়ী এ নারী জানান, ২০০৯ সালের দিকে স্থানীয় কৃষি দফতরের সহায়তায় তিনি শুরু করেন কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন। এর আগে ৬ মাস কৃষক মাঠ স্কুলে পাঠ নেন বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে। ফলে পরের ধাপে সফলতা ধরা দেয় অনায়াসে। শুরু থেকেই তাকে সমর্থন দিচ্ছেন স্বামী কংগ্রেস টুডু। তবে আগে এলাকার লোকজন এ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু তারাই এখন কেঁচো সার উৎপাদনে এগিয়ে আসছেন। সবজি ও ফল বাগান করছেন বসতবাড়ির আশপাশে। নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনের দিন বদলের অগ্রযাত্রা তাকে আশাবাদী করেছে।
২০০৫ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়েন আদুরী মার্ডি। দারিদ্র্য বাবা-মা বিয়ের পিঁড়িতে বসান। এরপর স্বামীর সংসারে এসে বনে যান কৃষাণী। তার স্বামী কংগ্রেস টুডু প্রান্তিক কৃষক। নিজস্ব জমি বলতে রয়েছে দেড় বিঘা ধানি এবং ৫ কাঠার বসতভিটা।
আগে নিজের জমি ছাড়াও কাজ করতেন অন্যের ক্ষেতে। এখন সবমিলিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমি আবাদ করেন আদুরী-কংগ্রেস দম্পতি। তাদের ক্ষেতে এখন কাজ করেন অন্য শ্রমিকরা।
আদুরী জানান, গত বছরই তিনি দেড় লাখ টাকায় তিন বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। তাতে আবাদ করেছেন এ বছর। গোয়ালে রয়েছে দুটি গাভীসহ ৭টি গরু। ছাগল রয়েছে ৬টি। পালন করেন হাঁস-মুরগিও। বসতবাড়ির আশপাশে সজনে-শিমসহ রয়েছে নানা জাতের সবজিবাগান।
আদুরীর ভাষ্য, দুই বছর আগে মাটিতে চাষ তৈরি করতেন কেঁচো সার। এখন রয়েছে ৯ চাঁড়িতে। তা থেকে ৫০ দিন পরপর প্রায় ৩ থেকে ৪ মণ ভার্মি কম্পোস্ট পান। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩ টাকা দরে। বাড়ি থেকেই আগ্রহী কৃষক নিয়ে যান সেই সার। নিজের ক্ষেতে এ সার প্রয়োগ করে ফলান ফসল। এরই মধ্যে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। টাকাও জমিয়েছেন। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। আগামীতে গরুর খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে দারিদ্র্য জয়ী এ নারীর।
আদুরী মার্ডি আরও জানান, তিনি এ বছর বঙ্গবন্ধু কৃষি রৌপ্যপদক পেয়েছেন। ২৫ গ্রাম ওজনের ১টি রৌপ্যপদক ছাড়াও পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে এ পদক তুলে দিয়েছেন। এ পদক প্রাপ্তিতে গর্বিত তিনি।
তার এ অর্জনে অনুপ্রাণিত এলাকার ভূমিহীন ও প্রাপ্তিক আদিবাসী কৃষাণ-কৃষাণীরা। এরই মধ্যে ৩০ জন নারী শুরু করেছেন বসতবাড়ির আশপাশে সবজি চাষ। সঙ্গে কেঁচো সার তৈরি শুরু করছেন তারা। অভিজ্ঞতা নিয়ে তাদের সহায়তায় মাঠে রয়েছেন আদুরী।
- মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
News Link:
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস